২০২২ বিশ্বকাপ যেসব স্টেডিয়ামে

দেখতে দেখতে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের দিন ঘনিয়ে আসছে। এবারের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে কাতারে। ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের দিক থেকে সবচেয়ে ছোট দেশ হবে এটি। এর আগে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট আয়োজক দেশ ছিল সুইজারল্যান্ড যা ১৯৫৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপে ১৬ টি দল নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল।
সাধারণত ফুটবল বিশ্বকাপ ৮ থেকে ১২ টি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকলেও সর্বশেষ তথ্য মতে কাতার বিশ্বকাপ আটটি ভেনুতে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্টেডিয়ামগুলোর বাহ্যিক সৌন্দর্য ছাড়াও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করায় প্রাধান্য দিচ্ছে কাতার। পরিবেশবান্ধব স্টেডিয়ামগুলো হবে শূন্য ভাগ কার্বন নিঃসরণকারী এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
চলুন জেনে আসি যে আটটি স্টেডিয়ামে খেলা অনুষ্ঠিত হবে তাদের সম্পর্কে –
লুসাইল স্টেডিয়াম:
কাতার বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম হল লুসাইল স্টেডিয়াম যার অবস্থান রাজধানী থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে নবনির্মিত লুসাইল সিটিতে। ৮৬ হাজার ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়ামটিতেই ২০২২ সালের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী এবং সমাপনী খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই স্টেডিয়ামের চারপাশে রয়েছে কৃত্রিম জলাধার আর এর বাইরে রয়েছে মোট ৬ টি পার্কিং এরিয়া। পার্কিং এরিয়ার সাথে স্টেডিয়ামটি সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে। গোলাকার ছাদবিশিষ্ট স্টেডিয়ামটি ইনডোর কিংবা আউটডোর দুই ধাঁচেই পরিণত করা যাবে। চাইলে এর ছাদের অংশবিশেষ সম্পূর্ণ খুলে উন্মুক্ত আকাশের দৃশ্যও উপভোগ করা যাবে। বর্তমানে স্টেডিয়ামটি নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে যার উদ্বোধন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২০২১ সালে।

লুসাইল স্টেডিয়াম
আল বাইত স্টেডিয়াম:
প্রায় ৬০ হাজার ধারণক্ষমতার আল বাইত স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত একাধিক খেলার আয়োজন করার উদ্দেশ্য রয়েছে। বাইত একটি আরবী শব্দ যার অর্থ হলো বাড়ি। তাঁবুর মত দেখতে এই স্টেডিয়ামটি কাতারের আল খোর শহরে নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। স্টেডিয়ামটির আকৃতির সাথে কাতার এবং অন্যান্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রের আরবরা বাড়ি হিসেবে যে ধরনের তাঁবু ব্যবহার করে তার আকৃতির অনেকটাই মিল রয়েছে। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর স্টেডিয়ামটির অংশবিশেষ স্থানান্তর করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই এর উপরের সারির আসনগুলো সেভাবেই তৈরি করা হবে যাতে করে সেগুলো স্থানান্তর করা যায়। তখন এর আসনসংখ্যা পরিবর্তিত হয়ে ৩২ হাজারে পরিণত হবে বলেও জানা যায়।

আল বাইত স্টেডিয়াম
আহমেদ আলী স্টেডিয়াম:
কাতারের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্থানীয় ফুটবল ক্লাব হলো আল রায়ান স্পোর্টস ক্লাব যার আহমেদ আলী স্টেডিয়াম নামে একটি নিজস্ব স্টেডিয়াম রয়েছে। স্টেডিয়ামটিকে বিশ্বকাপের জন্য পুনঃসংস্কার করে আল রায়ান স্টেডিয়াম নামে নামকরণ করা হবে। প্রায় ৪৪ হাজার ধারণ ক্ষমতাবিশিষ্ট এই স্টেডিয়ামটিও বর্তমানে নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে যার উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে ২০২১ সালে। বিজ্ঞাপন সহ বিভিন্ন দৃশ্য প্রক্ষেপণের উদ্দেশ্যে এই স্টেডিয়ামের বাইরের আবরণটি একটি ত্রিমাত্রিক গোলাকার পর্দার মতো কাজ করবে।

আহমেদ আলী স্টেডিয়াম
আল ওয়াকরাহ স্টেডিয়াম:
বক্রতার রানী হিসেবে পরিচিত ইরাকি-আমেরিকান যাহা হাদিদের এক অসাধারণ সৃষ্টি হল আল ওয়াকরাহ স্টেডিয়াম যেটি অত্যন্ত সৃজনশীল, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং নান্দনিক ডিজাইন সম্পন্ন। প্রায় ৪০ হাজার ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট স্টেডিয়ামের আকৃতির অনুপ্রেরণা তিনি আরব সাগরের বুকে ঢেউয়ের স্রোতে ভেসে চলার সময় স্থানীয় দাউ নৌকার ফুলে ওঠা পালের আকৃতি থেকে পেয়েছেন বলে জানা যায়। কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ম্যাচ এখানে আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্টেডিয়ামটি আল জানুব স্টেডিয়াম নামে ২০১৯ সালে উদ্বোধন করা হয়েছে।

আল ওয়াকরাহ স্টেডিয়াম
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম:
কাতারের যেখানে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্র অবস্থিত সেই এডুকেশন সিটিতে রয়েছে কাতার ফাউন্ডেশন স্টেডিয়াম যা এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। ঐতিহাসিক ইসলামিক স্থাপত্য এবং আধুনিক প্রযুক্তির অপূর্ব সমন্বয়ে এক জটিল জ্যামিতিক নকশাঙ্কন করা হয়েছে স্টেডিয়ামটির। সূর্যের স্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে এর বহির্ভাগে অবস্থিত ত্রিভুজ এবং হীরকাকৃতির জটিল জ্যামিতিক নকশার রঙ পরিবর্তিত হবে। ৪০ হাজার ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট স্টেডিয়ামটি ইতোমধ্যেই উদ্বোধন করা হয়েছে। বিশ্বকাপ আয়োজনের শেষে এর ১৫ হাজার আসন অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে।

এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম
খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম:
কাতারের সবচেয়ে পুরনো স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে একটি হল খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম যা ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাতারের সাবেক আমির খলিফা বিন হামাদ আল থানির নাম অনুসারে নামকরণ করা স্টেডিয়ামটি মূলত দোহা স্পোর্টস স্মৃতির একটি অংশ। স্টেডিয়ামটিতে আগে থেকেই বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলাধুলা আয়োজিত হয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে এটিকে নতুন করে সংস্কার করে ২০১৭ সালে পুনরায় উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ৪০ হাজার ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট স্টেডিয়ামের উল্লেখযোগ্য একটি বৈশিষ্ট্য হল এতে রয়েছে আকর্ষণীয় নকশার দ্বৈত খিলান যার সাথে দীর্ঘ পথ জুড়ে রয়েছে প্রশস্ত শামিয়ানা।

খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম
আল থুমামা স্টেডিয়াম:
কাতারের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় পরিচয়ের নিদর্শনস্বরূপ যে স্টেডিয়ামের ডিজাইন করা হয়েছে সেটি হলো আল থুমামা স্টেডিয়াম। এর আকৃতি দেখতে বিশাল এক হাতে বোনা টুপির মতো যাকে স্থানীয় ভাষায় গাফিয়া বলা হয় এবং এ ধরনের টুপি প্রায় সব উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রের পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রায় ৪০ হাজার ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট স্টেডিয়ামটির অবস্থান রাজধানী দোহার সমুদ্রতীরের উদ্যান থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে। এখানে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত একাধিক ম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

আল থুমামা স্টেডিয়াম
রাস আবু আবুউদ স্টেডিয়াম:
রাস আবু আবুউদ স্টেডিয়াম নামে আরো একটি স্টেডিয়াম বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য নির্মাণ করা হবে কাতারে। ৪০ হাজার ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট স্টেডিয়ামটি এখন পর্যন্ত পরিকল্পনাধীন অবস্থায় রয়েছে।

রাস আবু আবুউদ স্টেডিয়াম
ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২ তম আসর এবং আরব বিশ্বে ফিফার প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০২২ সালের এই বিশ্বকাপটি। ৩২ দল বিশিষ্ট এটিই ফিফার সর্বশেষ বিশ্বকাপ। ২০২২ সালের ২১ শে নভেম্বর থেকে ১৮ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এবারের বিশ্বকাপটি।
তথ্যসূত্র এবং আলোকচিত্রঃ ইন্টারনেট