‘ড্রাগন’ – এক আশ্চর্য প্রাণী!

ড্রাগন – নামটা সবার কাছেই অনেক পরিচিত। হলিউডের মুভি, সিরিজ কিংবা বিদেশী সাহিত্যে এর ব্যবহারের জোরেই সবার মনে খুঁতখুঁত করে আসলেই কি এর অস্তিত্ব ছিল! মানবমনের অদ্ভুত কিছু বৈশিষ্ট্যের একটি হলো অদেখা সবকিছুর উপর প্রবল আগ্রহ- হোক না সেটা কোন বস্তুই কিংবা প্রাণী। ড্রাগনকে কেউ চোখে না দেখলেও বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী, রূপকথা বা উপকথায় এর অনেক কাহিনী বিধৃত আছে। আবার গেম অফ থ্রোনস এর মতো সিরিজের ব্যাপক সফলতা এবং জনপ্রিয়তার পেছনেও এই প্রাণীর চিত্রায়ন অনেকাংশে ভূমিকা রেখেছে বলেও মনে করা হয়।
ড্রাগন শব্দটি গ্রীক শব্দ Drakon থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর অর্থ বৃহৎ আকারের সাপের মতো প্রাণী। চীনের জাতীয় প্রতীক এই ড্রাগন।
ড্রাগনের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে হলে ফিরে তাকাতে হবে পৌরাণিক উপকথা-রূপকথার দিকেই। ড্রাগন বলতেই কল্পনাতে ভেসে উঠে বিশালাকার ভয়াল এক ডানাওয়ালা পাখীর মতোন প্রাণী যার মুখ থেকে আগুন বের হয়। আবার একাধিক মাথাওয়ালা ড্রাগনের গল্পও পাওয়া যায়। যেমন- হাইড্রা নামের এক ধরণের ড্রাগনের কাহিনি শোনা যায়, যার মাথা ছিল ৯টি, স্বভাব-চরিত্রেও খুব খারাপ। প্রাচীন রূপকথা অনুসারে হারকিউলিস হত্যা করেছিল এই ড্রাগনকে। তবে চীনা পুরাণে ড্রাগনকে মনে করা হয় দয়ালু এবং জ্ঞানী প্রাণী।
মেসোপটেমিয়ায় বা বর্তমান মিশরে এক ধরনের ড্রাগন বাস করত যার নাম ছিল সাইরাশ বা মুশুসসু – সেখানকার মানুষ তাকে ঈশ্বর মনে করত। পুরাণ মতে ব্যবিলিয়নে ছিল এর অবস্থান এবং বাইবেলে উল্লেখিত ঈশ্বরের বাহক ড্যানিয়েলের কাছে পরাজিত হয়ে এটি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।
মিশরীয় পুরাণে এক ধরণের ড্রাগনের বর্ণনা আছে যাকে সূর্যের দেবতার চরম শত্রু বলে মানা হত, নাম ছিল অ্যাপেপ। এ নিয়ে অনেক গল্প, উপকথা আছে মিশরীয় পুরাণে, এমনকি মিশরীয় সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকও এই ড্রাগন।
প্রাচীন আর্য ধর্মাবলম্বীদের মতে ভৃতরা নামে এক ড্রাগন ছিল, যা নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে অনাবৃষ্টির সৃষ্টি করত। তাঁদের মতে ইন্দ্রা দেবতার কাছে পরাজিত হয়ে বিলুপ্ত হয় এই ড্রাগন।
আধুনিক যুগের পুরাণে লেভিয়াথান নামেরও এক ড্রাগনের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা সুবিশাল আকৃতির এবং নিঃশ্বাসের সাথে আগুন বের করে।
এ-তো গেল সব পৌরাণিক মতবাদ, কিন্তু সত্যিই কী বাস্তবে এসব প্রাণীর কোন অস্তিত্ব আছে? আধুনিক বিজ্ঞান অনুসারে এর উত্তর হয় সরাসরি ‘না’। তবে বাস্তবে ড্রাগন নামের বেশ কিছু প্রাণী আছেই।
কোমোডো ড্রাগন নামের একটি প্রাণী রয়েছে যা ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম একটি জাতীয় প্রাণী। এই প্রাণীটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোসাপ। বিশ্বের বৃহত্তম জীবিত এই টিকটিকির লালা খুবই বিষাক্ত, এমনকি প্রাণঘাতীর পর্যায়েও পড়ে। ইন্দোনেশীয় দ্বীপ কোমোডোতে একটি ড্রাগনসদৃশ প্রাণী বাস করত – এমন গুজব থেকে নামটা আসলেও সত্যিকার অর্থেই ভয়ংকর এই প্রাণী।
ফ্রিলড ড্রাগন নামে এক ধরনের প্রাণী রয়েছে যা উত্তর আফ্রিকার বনাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। ফ্রিল মানে হল কুচি, ঘাড়ের পাশে চামরায় এমন আর ভয়ংকরদর্শন বলেই এর নাম এরকম।
বিয়ার্ডেড বা দাড়িওয়ালা ড্রাগন নামের প্রাণীটির সত্যিকার দাড়ি না থাকলেও থুতনিতে ঐরকম কিছু অংশ আছে যা দাড়ির মতো দেখা যায়। অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রার সাথে রঙ বদলাতে পারে এরা।
সি হর্সের মতো ছোট একটি প্রাণী সে ড্রাগন নামে পরিচিত। আঁকাবাঁকা, রঙিন শরীরের অধিকারী এরা দেখতে অনেকটা চাইনিজ ড্রাগনের মতোই। তবে দেখতে ভয়ংকরদর্শন তো নয়-ই, বরং অসম্ভব সুন্দর।
সবচেয়ে পরিচিত যে ড্রাগন তার নাম ড্রাগন ফ্লাই। কল্পনার ড্রাগনের সাথে মেলাতে যাবেন না আবার, কারণ এ ড্রাগন আমরা সবাই দেখলেও কল্পনার সাথে কোন মিল নেই এর। ফড়িং নামে পরিচিত পতঙ্গটির ইংরেজি নাম এটি।